আদি খণ্ড

প্রথম তরঙ্গ

বন্দনা
জয় জয় হরিচাঁদ জয় কৃষ্ণদাস।
জয় শ্রী বৈষ্ণব দাস জয় গৌরী দাস।।
জয় শ্রী স্বরূপ দাস পঞ্চ সহোদর।
পতিত পাবন হেতু হৈলা অবতার।।
জয় জয় গুরুচাঁদ জয় হীরামন।
জয় শ্রী গোলোকচন্দ্র জয় শ্রী লোচন।।
জয় জয় দশরথ জয় মৃত্যুঞ্জয়।
জয় জয় মহানন্দ প্রেমানন্দময়।।
জয় নাটু জয় ব্রজ জয় বিশ্বনাথ।
নিজ দাস করি মোরে কর আত্মসাৎ।।

 

অথ মঙ্গলাচরণ

হরিচাঁদ চরিত্র সুধা প্রেমের ভাণ্ডার।

আদি অন্ত নাহি যার কলিতে প্রচার।।

সত্য ত্রেতা দ্বাপরের শেষ হয় কলি।

ধন্য কলিযুগ কহে বৈষ্ণব সকলি।।

তিন যুগ পরে কলি যুগ এ কনিষ্ঠ।

কনিষ্ঠ হইয়া হৈল সর্বযুগ শ্রেষ্ঠ।।

এই কলিকালে শ্রীগৌরাঙ্গ অবতার।

বর্তমান ক্ষেত্রে দারুব্রহ্মরূপ আর।।

যে যাহারে ভক্তি করে সে তার ঈশ্বর।

ভক্তিযোগে সেই তার স্বয়ং অবতার।।

হয়গ্রীব অবতার কপিলাবতার।

অষ্টাবিংশ অবতার পুরাণে প্রচার।।

মৎস্য কুর্ম বামন বরাহ নরহরি।

ভৃগুরাম রঘুরাম রাম অবতরি।।

ঈশ্বরের অংশকলা সব অবতার।

প্রথম পুরুষ অবতার রঘুবর।।

নন্দের নন্দন হ’ল গোলোকের নাথ।

সংকর্ষণ রাম অবতার তার সাথ।।

সব ঈশ্বরের অংশ পুরাণে নিরখি।

বর্তমান দারুব্রহ্ম অবতার কল্কি।।

সব অবতার হ’তে রাম দয়াময়।

দারুব্রহ্ম দয়াময় কৃষ্ণ দয়াময়।।

পূর্ণব্রহ্ম পূর্ণানন্দ নন্দের নন্দন।

সেই নন্দসুত হ’ল শচীর নন্দন।।

যে কালে জন্মিল কৃষ্ণ পূর্ণব্রহ্ম নয়।

পূর্ণ হ’ল যেকালে পড়িল যমুনায়।।

শচীগর্ভে জন্ম ল’য়ে না ছিলেন পূর্ণ।

দিক্ষাপ্রাপ্তে পূর্ণ নাম শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য।।

তখন হইয়া পূর্ণ সন্ন্যাস করিলে।

আটচল্লিশ বর্ষ পরে মিশিলা উৎকলে।।

সকল হরণ করে তাঁরে বলি হরি।

রাম হরি কৃষ্ণ হরি শ্রীগৌরাঙ্গ হরি।।

প্রেমদাতা নিত্যানন্দ তাঁর সমিভ্যরে।

হরিকে হরয় সেই হরিভক্ত দ্বারে।।

নিত্যানন্দ হরি কৃষ্ণ হরি গৌর হরি।

হরিচাঁদ আসল হরি পূর্ণানন্দ হরি।।

এই হরিচাঁদ লীলা সুধার সাগর।

তারকেরে কর হরি তাহাতে মকর।।

 

পুনর্বার অবতারের প্রয়োজন ও পূর্ব পূর্ব ভাগবত ও পুরাণ প্রসঙ্গ

ত্রিপদী

ত্রেতাযুগে সূর্য বংশে,     এক বিষ্ণু চতুরাংশে,

হ’ল দশরথের নন্দন।

দ্বাপরেতে কারাগারে,      জন্ম বাসুদেব ঘরে,

যশোদার হৃদয় রতন।।

যোগমায়ার প্রভাবে,       মাতা দেবকীর গর্ভে,

রোহিণী গর্ভেতে আকর্ষণ।

যোগমায়া আকর্ষণে,      জন্মিলেন বৃন্দাবনে,

বলরাম নাম সংকর্ষণ।।

নন্দের নন্দন যেই,        শচীসুত হ’ল সেই,

নিত্যানন্দ হৈল বলরাম।

সেই লীলা সম্বরণ,         খেতর জন্ম ধারণ,

নিত্যানন্দ হৈল নরোত্তম।।

শ্রীঅদ্বৈত রামচন্দ্র,         শ্রীনিবাস গৌরচন্দ্র,

তিন প্রভু প্রেম প্রচারিলা।

যে জন্যে এ অবতার,      পশ্চাতে করি প্রচার,

ওঢ়াকাঁন্দি কৈল শেষ লীলা।।

যস্য পুত্র যস্য নাম,       যথা হ’ল জন্মধাম,

করিলাম লিখিতে আশায়।

রসিক সজ্জন বিজ্ঞ,        দেহ মোরে এই ভাগ্য,

মনোজ্ঞ নিষ্ফল যেন নয়।।

মানবকুলে আসিয়ে,       যশোমন্ত সুত হ’য়ে,

জন্ম নিল সফলানগরী।

প্রচারিল গূঢ়গম্য,                    সূক্ষ্ম সনাতন ধর্ম,

জানাইল এ জগত ভরি।।

 

পয়ার

কি ধন্য প্রভুর লীলা এই কলিযুগে।

সব লীলা হ’তে ধন্য হ’ল ভক্তিযোগে।।

দশরথ গৃহে জন্ম লইয়া শ্রীরাম।

ভূভার হরণ পূর্ণ ভক্ত মনস্কাম।।

বৈকুণ্ঠ নায়ক হরি হৈল লীলাকারি।

নন্দের নন্দন কৃষ্ণ গোলোক বিহারী।।

ভূভার হরণ ভক্ত মনোরম্য কারী।

ভক্ত সঙ্গে প্রেম রস মধুর মাধুরী।।

তিন শক্তি একত্র হইয়া ভগবান।

দেবকীর বায়ুগর্ভে দুই শক্তি যান।।

ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণে মিমাংসা র’য়েছে।

যশোদার গর্ভে মহাবিষ্ণু জন্মিয়াছে।।

চারি শক্তি একযোগে হয় কৃষ্ণ লীলা।

ভাগবতে শুকদেব মিমাংসা করিলা।।

বহুত প্রমাণ লাগে সে সব লিখিতে।

অন্যান্য প্রমাণ গ্রন্থে র’য়েছে বর্ণিতে।।

চৈতন্যচরিতামৃত তাহার প্রমাণ।

বহু যুগ গত পরে এল ভগবান।।

নন্দসূত ব’লে যারে ভাগবতে গাই।

সেই কৃষ্ণ অবতীর্ণ চৈতন্য গোঁসাই।।

বহুত দ্বাপর কলি আসে আর যায়।

স্বয়ং এঁর অবতার তাতে নাহি হয়।।

অষ্টাবিংশ মন্বন্তর শেষ যেই কলি।

অবতীর্ণ ভক্তবৃন্দ লইয়া সকলি।।

যে দ্বাপরে অন্য শক্তি বিবর্জিত হ’য়ে।

গোলোকবিহারী লীলা গোলকে আসিয়ে।।

দ্বাপরের শেষ সেই কলির সন্ধ্যায়।

শ্রীগৌরাঙ্গ রুপে প্রভু জন্ম নদীয়ায়।।

এই সেই কলি এই সেই অবতার।

অনর্পিত প্রেম ভক্তি অর্পিল এবার।।

সেই তো গৌরাঙ্গ প্রভু এই কলিকালে।

অবতীর্ণ নদীয়াতে হরি হরি বলে।।

উৎকলেতে লীলা সাঙ্গ অল্পেতে করিল।

মনের কামনা বহু মনেতে রহিল।।

চৈতন্যচরিতামৃত মঙ্গলাচরণে।

প্রভুর মনের কথা লিখিল যতনে।।

দাস্য সখ্য বাৎসল্য মধুর চারি রস।

চারি ভাবে ভক্ত হত কৃষ্ণ তার বশ।।

আপনিও এই ধর্ম করিব যাজন।

ইহা দ্বারা করাইব ভক্তের শিক্ষণ।।

সন্যাস করিল প্রভু এই ধর্ম লয়ে।

রাগানুগা প্রেমভক্তি হাটে বাহুড়িয়ে।।

গৌড়িয়ার ভক্ত তার নাহি পায় লেশ।

শুদ্ধাচার সেবা ভক্তি নাম ভাবাবেশ।।

আটচল্লিশ বর্ষ পরে প্রভু দিল ফাঁকি।

এই ত প্রতিজ্ঞা এক রহিলেক বাকী।।

কাশিতে বসিয়া সনাতনে শিক্ষা দিলা।

সনাতনে শিক্ষাকালে অনেক কহিলা।।

অকামনা প্রেম ভক্তি কেবলার রীতি।

আপনি বা তাহা কই পারিল বর্তাইতি।।

কেবলার রীতি এই কৃষ্ণেতে ঐকান্তি।

তার আগে ভক্তি মুক্তি সকলি অশান্তি।।

কৃষ্ণ গত প্রাণ হ’বে কৃষ্ণ সুখে সুখী।

কার দেহ লয়ে প্রভু মারে ঝাঁকি ঝুকি।।

কৃষ্ণতে অর্পিত দেহ এদেহ কৃষ্ণের।

আছুক অন্যের কার্জ নিজে হৈল ফের।।

হাত পা বাহির হ’য়ে সন্ধিকল ছুটে।

কচ্ছপ আকার হ’য়ে ক্ষণে পৈশে পেটে।।

যদ্যপি প্রভুর মনে থাকে কোন ভাব।

যা দেখিনু তা লিখিনু গ্রন্থের যে ভাব।।

তবেত প্রভুর মনে কামনা রহিল।

অকামনা প্রেম ভক্তি কই পাওয়া গেল।।

কামনা রহিল আছে দৃষ্টান্ত তাহার।

অদ্বৈতেরে করে ধরি বলে বার বার।।

বৈকুণ্ঠাদ্যে নাহি সেই লীলার প্রচার।

শেষ যে করিব লীলা মোরে চমৎকার।।

তুমি আমি নিত্যানন্দ এই তিন জন।

করিব নিগুড় লীলা রস আস্বাদন।।

তুমি হ’বে রামচন্দ্র আমি শ্রীনিবাস।

দাদা নিত্যানন্দ হবে নরোত্তম দাস।।

শেষ লীলা তিন জন করিল আসিয়া।

প্রচারিল প্রেম ভক্তি খেতর যাইয়া।।

নিগুড় ভজন লীলা করে তিন জন।

ভাগ্যবান ভক্ত যারা করে দরশন।।

তাদের ভজন গ্রন্থ পড়ে দেখ ভাই।

অকামনা প্রেম ভক্তি তাতে বর্তে নাই।।

উদ্দেশ্য থাকিল পুনঃ আসিয়া ধরায়।

ঐ প্রেম আস্বাদিবে তিন মহাশয়।।

সে কারণ অবতার হৈল প্রয়োজন।

সফলানগরী যশোমন্তের নন্দন।।

শচীর নন্দন যবে পড়ে পাঠশালে।

পড়ুয়ার সঙ্গে সদা হরি হরি বলে।

যে জন না বলে হরি কর্মসুতে মরে।।

ঠেঙ্গা লয়ে যায় প্রভু তারে মারিবারে।

সেই গিয়া করে সায় পাষণ্ড সঙ্গেতে।

মারিব মিশ্রের সুতে আইলে মারিতে।।

অন্তর্যামী ভগবান জানিলেন চিতে।

এরুপে না পারিলাম হরিনাম দিতে।।

একবার মাতাকে দিলাম পরিচয়।

গ্রহণের বেড়ি গড়ি দিল মোর পায়।।

স্বীয় পরিচয় তাহে দিবার কারণে।

উদয় হইনু হাত গণকের স্থানে।।

সে মোরে গণীয়া বলে নন্দের নন্দন।

এবে শচীসুত জীব উদ্ধার কারণ।।

কর্মসুত্রে বদ্ধ জীব না চিনিল মোরে।

গণীয়া দেখিয়া বলে একি হ’তে পারে।।

প্রভু কন তার পূর্ব জন্মে কে বা আমি।

ঠিক করি গণনা করহ দেখি তুমি।।

গণক বলেন ছিলে অযোধ্যায় রাম।

কৌশল্যা জননী পিতা দশরথ নাম।।

তুমি ছিলে রামচন্দ্র জগতের মূল।

ফিরে বলে এ গণনায় হইয়াছে ভুল।।

বদ্ধ কর্মসুত্রে জীব উদ্ধারি কেমনে।

কাঙ্গাল হইব আমি তাহার কারণে।।

কেশ মুড়ি কড়া ধরি হইব কাঙ্গাল।

ঘরে ঘরে মেগে খাব হইয়া বেহাল।।

কাঁদিয়া কাঁদিয়া পুরাইব মনস্কাম।

হাতে ধরি পায় ধরি দিব হরিনাম।।

কাঙ্গাল দেখিয়া মোরে দয়া উপজিবে।

চিত্ত দ্রবিভুত হ’য়ে হরিনাম ল’বে।।

মুকুন্দমুরারী আর নিত্যানন্দ ল’য়ে।

কহিলেন মনকথা নিভৃতে বসিয়ে।।

পরে কহিলেন শচী মাতাকে কাঁদিয়া।

তাহা শুনি শচীরাণী অধৈর্য হইয়া।।

কহিলেন শচীমাতা বাছারে নিমাই।

ছেড়ে যদি যাও রাখিবার সাধ্য নাই।

অনেক প্রলাপ মাতা করিল তাহাতে।

সান্তনা করিল মাকে মধুর বাক্যেতে।।

শচী বলে তুমি যদি মোরে ছেড়ে যাবে।

এ ব্রহ্মাণ্ডে তবে আর মাতা কে মানিবে।।

এ সময় গৌরাঙ্গ করিল অঙ্গীকার।

তোমাকে ছাড়িতে মাতা শক্তি কি আমার।।

শোধিতে নারিব মাতা তব ঋণধার।

জন্মে জন্মে তব গর্ভে হব অবতার।।

ধর্ম সংস্থাপন আর জীবের উদ্ধার।

এই রূপে লইব জন্ম আর দুইবার।।

তারপর শ্রীনিবাসরূপে জন্ম নিল।

নরোত্তমরূপে নিত্যানন্দ জন্মিল।।

আর এক জন্ম বাকী রহিল প্রভুর।

এই সেই অবতার শ্রীহরি ঠাকুর।।

মহানন্দ চিদানন্দ রচিতে পুস্তক।

পয়ার প্রবন্ধ ছন্দে রচিল তারক।।

 

অথ দণ্ডভঙ্গ- বিবরণ

এবে শুন দণ্ডভঙ্গ নিগুঢ় কারণ।

দণ্ড ভাঙ্গা ঘাট এবে আছে নিরূপণ।।

ভারতীকে কৈলা গুরু কাটোয়ায় আসি।

শ্রীগৌরাঙ্গরূপে প্রভু হইল সন্ন্যাসী।।

দণ্ড কমণ্ডলু করে কোটিতে কপীন।

সন্ন্যাসী হইল পরে অতি দীন হীন।।

আর ত নিগুঢ় দেখত ভাবিয়া।

নিত্যানন্দ দণ্ড ভাঙ্গে কিসের লাগিয়া।।

কেহ কহে নিত্যানন্দ পরম উদার।

সে কারণ দণ্ড খণ্ড করিল তাঁহার।।

কেহ বলে মহাপ্রভু সকল ত্যাজিল।

সব ত্যাজি কেন এই দণ্ডটি রাখিল।।

তাহে ক্রোধ করি নিত্যানন্দ ভাঙ্গে দণ্ড।

কেহ কহে ছল করি ভুলায় ব্রহ্মাণ্ড।।

ভাগবত লিলামৃতে আছয় প্রকাশ।

চলিলেন মহাপ্রভু করিতে সন্ন্যাস।।

নিত্যানন্দ দণ্ড প্রতি বলে ওরে দণ্ড।

তোরে করি দণ্ড তুই বড়ই পাষণ্ড।।

ব্রহ্মা বিষ্ণু শুলিন্দ্র যাঁহার আজ্ঞাকারী।

সে কেন বহিবে তোরে হ’য়ে দণ্ডধারী।।

অবশ্য ভক্তের বাক্য নহে ব্যভিচারী।

এ সব সিদ্ধান্ত আমি শিরোধার্য করি।।

স্বয়ং এর কার্য্য এই আছে চিরধার্য্য।

এক কার্য্য অবিলম্বে বাড়ে বহু কার্য্য।।

দুই তিন অবিলম্বে এক কার্য্য হয়।

নিগুঢ় আস্বাদি স্বাভাবিক যে দেখায়।।

হেন মানি নিত্যানন্দের অসহ্য হইল।

সে কারণ প্রভু দণ্ড খণ্ড যে করিল।।

এ জন্য অসহ্য হ’লে নিত্যানন্দের মনে।

বৈরাগ্য করিতে আসি দণ্ড নিলি কেনে।।

অহৈতুকী প্রেম ভক্তি প্রকাশিবি দেশে।

ব্রজরস আস্বাদিতে দণ্ড লাগে কিসে।।

নিজে না জানিলে ধর্ম শিক্ষণ না যায়।

এ মত সিদ্ধান্ত গীতা ভাগবতে গায়।।

ব্রজ বিনে জানি বিনে রাধা রস বই।

ন্যাসী হ’লি দণ্ড নিলি তা পারিলি কই।।

দণ্ড কমণ্ডলু ইহা সন্ন্যাসি বৈভব।

যোগী ন্যাসী তীর্থবাসী তেয়াগিয়ে সব।।

কহে ব্যাস সন্ন্যাস নাহিক কলিকালে।

তার মাঝে বৃথা কাজে দণ্ড কেন নিলে।।

 

শ্লোক

অশ্বমেধগবালম্বে সন্ন্যাসপলপৈতৃকম।

দেবরেণ সুতোৎপত্তি কলৌ পঞ্চ বিবর্জিতম্।।

 

পয়ার

মাধুর্যের মধ্যে নাই সন্ন্যাসের ধর্ম।

সন্ন্যাসীর ন্যাসযোগে ঐশ্বর্যের কর্ম।।

অকামনা শুদ্ধ প্রেম সভক্তি আশ্রয়।

দিবে জীবে আচরিবে তাহা কই হয়।।

ভক্ত পক্ষে সন্ন্যাস ঘৃণিত অকারণ।

তার লেশ বেশ কেন করিলি ধারণ।।

ব্রহ্মত্ব সাধুজ্য মুক্তি কৃষ্ণভক্তে দণ্ড।

হরিনামে পাপ ক্ষয় কহে কোন ভণ্ড।।

মুক্তিশ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যে যারা ভক্তি নাহি চিনে।

হরিনামে পাপ ক্ষয় তারা ইহা মানে।।

মুক্তিকে যে তুচ্ছ করে ভক্তি করে সার।

পুণ্যকে না দেয় স্থান পাপ কোন ছার।।

হরিনামে প্রেমপ্রাপ্ত সাধুদের বাণী।

প্রেমরূপা আহ্লাদিনী রাধাঠাকুরানী।।

যেই নাম সেই হরি শ্রীমুখের বাক্য।

জীবে কেন মনে প্রাণে নাহি করে ঐক্য।।

নাম সুপ্রসন্ন হ’লে আহ্লাদিনী পাই।

বিশুদ্ধ পীরিতি ব্যাখ্যা আর বাক্য নাই।।

শুদ্ধ মানুষেতে আর্তি নৈষ্ঠিক ভজন।

তার কিসে গয়া কাশী আর বৃন্দাবন।।

বেহালের বেশ মাত্র দণ্ড যে ধারণ।

জ্ঞানমিশ্রা ভক্তি এত আইল এখন।।

এত বাহ্য কহে যেই তার কেন দণ্ড।

এ কারণ নিত্যানন্দ দণ্ড কৈল খণ্ড।।

অন্তরে উল্লাস প্রভু বাহ্যে খেদান্বিত।

নিত্যানন্দ প্রেমে প্রভু হইল প্রতীত।।

এইভাব মহাপ্রভু দেখিল আচরি।

এ লীলায় প্রেম কই আচরিতে পারি।।

মহাভাবে দণ্ডভঙ্গ নিতাই মাতিল।

সে ভাব লইতে প্রভুর বাকী পড়ে গেল।।

এ কারণ অবতার হৈল প্রয়োজন।

এ লীলায় করিলেন সে ভাব গ্রহণ।।

 

ভক্ত-কন্ঠহার

আর এক সুবিচার অন্তরে জাগিল

দণ্ড ভাঙ্গি কমণ্ডলু কেন না ভাঙ্গিল।।

উভয়ের ভাব তাহা উভয়ে জানিলা।

শেষ লীলা কমণ্ডলু ভেঙ্গে হ’বে মালা।।

লক্ষ্মীকে করিয়া ত্যাগ কমণ্ডলুধারী।

কমণ্ডলু ভেঙ্গে লক্ষ্মী বলাইবে হরি।।

প্রভুর হাতের কড়া মান্য রাখি তার।

কমণ্ডলু হ’বে তার ভক্ত-কণ্ঠহার।।

সে কারণ অবতার হৈল প্রয়োজন।

শুদ্ধ প্রেম বিতরণ জীবের কারণ।।

সু-বিশুদ্ধ প্রেম দান গৌরাঙ্গ লীলায়।

সে প্রেম শোষিল প্রায় কলির মায়ায়।।

আদেশে গোলোকচন্দ্র নরহরি কায়।

রচিল তারকচন্দ্র ভেবে মৃত্যুঞ্জয়।।

 

জম-কলি প্রভাব গ্রন্থালোচনা

পুনঃ প্রেম প্রচারিতে হইল মনন।

সে কারণ হ’ল যশোমন্তের নন্দন।।

যদি বল গৌরাঙ্গের প্রেম তুচ্ছ নয়।

সে প্রেম শোষিবে কেন কলির মায়ায়।।

তার সাক্ষী ভাগবতে আছয় প্রমাণ।

রাজা পরীক্ষিত যান করিবারে স্নান।।

বৃষরূপে ছিল ধর্ম দাড়িয়ে তখন।

মুদ্গর লইয়া কলি ভেঙ্গেছে চরণ।।

হেনকালে বসুমতি সুরভী রূপেতে।

কেঁদে কেঁদে কহে ডেকে রাজা পরীক্ষিতে।।

অই কলি অই ধর্ম এই আমি ক্ষিতি।

রক্ষা কর বিপদে ধার্মিক নরপতি।।

কলিকে ধরিয়া রাজা চাহিল কাটিতে।

শরণ লইল কলি প্রাণের ভয়েতে।।

রাজা বলে না রহিবি মম অধিকারে।

চারি স্থান চাহি নিল কলি পরিহারে।।

স্বর্ণকার দোকান অপর বেশ্যালয়।

সুরাপান জীব হত্যা যে যে খানে হয়।।

চারিঠাঁই পেয়ে কলি পাইল আহ্লাদ।

ভাবে সর্বঠাঁই হ’ল আমার প্রসাদ।।

ধনবান হলে যাবে স্বর্ণকার ঠাঁই।

দোকান স্পর্শিলে কলি তাহা কই এড়াই।।

ইহাতেও কেহ যদি না ভুলে মায়ায়।

রসিকের ধর্ম দিয়া অনেকে মজায়।।

তার সাক্ষী শ্রীগৌরাঙ্গ ধর্ম যবে নিল।

চিত্রগুপ্ত ত্রস্তচিত্তে খাতা ফেলাইল।।

মৌন হ’য়ে বসিলেন যম মহাশয়।

কাম ক্রোধ ষড়রিপু হইল উদয়।।

যার যার প্রাদুর্ভাব জানাইল তাই।

সবে কহে যমঅধিকার যায় নাই।।

সে সব লিখিতে গেলে পুঁথি বেড়ে যায়।

সংক্ষেপে লিখিব কিছু শাস্ত্রে যাহা কয়।।

কাম বলে যমরাজ চিন্তা কই তোমার।

আমি ভরি দিব তব দক্ষিণের দ্বার।।

 

শ্লোক

কা চিন্তা ভো মৃত্যুপতে অহং প্রকৃতি ভবান্।

শোষিতং শোষিতং প্রেম চৈতন্যং কিং করিষ্যতি।।

 

পয়ার

শোষিব শোষিব প্রেম প্রকৃতি হইয়া।

কি করিতে পারে একা চৈতন্য আসিয়া।।

বলে কলি শুন বলি ধর্ম নরমনি।

আমি দিব গৌরাঙ্গের সব ভক্ত আনি।।

ধরিব বৈরাগ্য বেশ মুখে রেখে দাড়ি।

ভেকধারী সাধু হ’য়ে ফিরিব বাড়ী বাড়ী।।

চৈতন্যের তত্ত্ব যাতে কেহ নাহি মানে।

শিখাইব এই তত্ত্ব সুযুক্তি বিধানে।।

যম কলি প্রভাব এ গ্রন্থ বিরচিত।

জীব গোঁসাই সেই গ্রন্থ গোস্বামী লিখিত।।

নানা মত করি কলি জীব ভুলাইল।

শাস্ত্র ছাড়া মত কত কলি দেখাইল।।

মাতা পিতা না মানে না মানে গুরুজন।

নারী বাধ্য পিতা করে পুত্রে বিসর্জন।।

আর দেখ গৌরাঙ্গের মত যত ছিল।

তাহার মধ্যেতে কলি কত মত দিল।।

গৌরাঙ্গের মত প্রায় লোপ হয়ে যায়।

নরোত্তম শ্রীনিবাস এসে এ সময়।।

দুই প্রভু শেষ লীলা করিল উজ্জ্বল।

মধুর মাধুর্য প্রেম প্রকাশি সকল।।

আবার হইল লোপ কলির মায়ায়।

গোস্বামীর ধর্ম বলি বিপথে লওয়ায়।।

প্রকৃতি হইয়া প্রেম করিল শোষণ।

চমকিত হইল যত সাধকেরগণ।।

বীরভদ্র প্রিয় শিষ্য চারিজন ছিল।

প্রতিজ্ঞা করিয়া তারা কহিতে লাগিল।।

যথাকার বিন্দু মোরা তথায় পাঠাব।

প্রকৃতির স্থানে বিন্দু কিছু না রাখিব।।

বনচারী অখিলচাঁদ সেবা কমলিনী।

হরি-গুরু এই চারি সম্প্রদায় জানি।।

পূর্ব পূর্ব মহাজন যে ধর্ম যাজিল।

বীরভদ্র সেই ধর্ম শিষ্যে জানাইল।।

প্রকৃতি আশ্রয় করি সিদ্ধিপ্রাপ্ত হ’ল।

সে কারণ চারিজন প্রতিজ্ঞা করিল।।

আধুনিক সেই ধর্ম শুনিয়া শ্রবণে।

প্রকৃতি আশ্রয় লোভে শিক্ষাগুরু জানে।।

গৃহধর্ম ত্যাগ করি পচা গৃহী হয়।

করয় প্রকৃতি সঙ্গ ধর্ম নাহি রয়।।

বুঝিতে না পারে ধর্ম করে নারীসঙ্গ।

হাতে তালি দেয় কলি দেখিয়া সে রঙ্গ।।

বিধবা হইল কোন যুবতি রমণী।

গর্ভবতী হ’লে তারে ভেক দেয় আনি।।

পচাগৃহী শিষ্য করি রাখে যে তাহারে।

সেই গর্ভে পুত্র হ’লে সেবাইত করে।।

জাতিতে বৈরাগী তার হয় পরিচয়।

করতালি দেয় কলি দেখিয়া তাহায়।।

শ্রীগৌরাঙ্গ প্রভু যবে প্রেম প্রকাশিল।

সভক্তি দুর্লভ প্রেম জীবে শিক্ষা দিল।।

চরিং চিরাৎ যেই প্রেম ছিল অনর্পিত।

বিরিঞ্চি বাঞ্চিত প্রেম নামের সহিত।।

বিলাইল সেই প্রেম নাম রসে মাখা।

তাহা দেখি চিত্রগুপ্ত ছেড়ে দিল লেখা।।

যমরাজ ছাড়ে ধর্মাধর্মের বিচার।

অবসর হ’য়ে কহে গেছে অধিকার।।

তাহা শুনি কলিরাজ ছয় রিপু লয়ে।

যম চিত্রগুপ্ত স্থানে উত্তরিল গিয়ে।।

কলিরাজ ডাকে মহা মায়াকে স্মরিয়া।

মহামায়া এল কলি সপক্ষ হইয়া।।

কলি কহে ধর্মরাজ কেন অবসর।

চিত্রগুপ্ত লেখা ছাড়ে কেমন বর্বর।।

চিত্রগুপ্ত বলে খাতা রাখিব কি জন্য।

লেখা পড়া দু’টা মোর পাপ আর পুণ্য।।

পাপ গেল পুণ্য গেল লেখা গেল মোর।

এবে কি লিখিব যা বিধির অগোচর।।

যম কহে অধিকার গিয়াছে আমার।

পাপ পুণ্য শুন্য কার করিব বিচার।।

কলি কহে মম অধিকার যদি রয়।

তোমার এ অধিকার থাকিবে নিশ্চয়।।

লোভ কহে আমি লোভাইব সব সাধু।

প্রেমমধ্যে দেখাইব নারীমুখ বিধু।।

এককালে লোভাইব বৈরাগী সকল।

পঞ্চরসিকের ক্রিয়া দিয়া নারীকোল।।

গৌরাঙ্গের সঙ্গে হরি কীর্তন ভিতরে।

নারী আর পুরুষ মাতাব একেবারে।।

দুইরূপ বৈরাগীর গৌড়িয়া বাতুল।

জাতি ল’য়ে দলাদলি ভুলাইব মূল।।

মদ কহে মাৎসর্য্য জন্মাব দম্ভসহ।

নামে প্রেমে মন মজা’তে নারিবে কেহ।।

কাম কহে বৈস গিয়া তব রাজপাটে।

তব অধিকার দিব প্রেম নিব লুটে।।

মহাজনী পথ বলি দেখাইব পথ।

চৈতন্যের মত ভুলি ডুবিবেক সৎ।।

শিবের চৌষট্টি নিশা দ্বাদশ পাগল।

ইহাদিগে লইয়া বলা’ব হরিবোল।।

পরাৎপর ব্রজরস প্রভু নিজ ধর্ম।

বেদাতীত গূঢ়ত্ব যা বিধির অগম্য।।

তাহা দেখাইয়া ভুলাইব কতগুলি।

নারী লুব্ধ করাইব মজা’ব সকলি।।

শ্রীনিবাস চৈতন্যের মত গোড়াইব।

তার মধ্যে অন্য অন্য মত চালাইব।।

সেই মত মাতাইব সকল জগৎ।

চৈতন্যের মত ছাড়ি ডুবিবেক সৎ।।

সংঘট ঘটাব মঙ্গল আর শনিবারে।

বার বার ‘বার’ বানাইব বারে বারে।।

বিল্ববৃক্ষ তুলসী মাহাত্ম্য লোপাইব।

হিজলিকা শড়াজিকা বার সাজাইব।।

চৈতন্যের মত বারে ক্রিব আসক্ত।

মজাইব চৈতন্যের আত্মসুখী ভক্ত।।

মাধুর্য্যের ভক্তে মোর নাই অধিকার।

ঐশ্বর্য্য ভক্তের ভক্তি দিব ছারখার।।

রোগাভক্তি করাইয়া মাতাইব সব।

এদিকেতে করিব রোগের প্রাদুর্ভাব।।

মত প্রচারিয়া মোর মতে আকর্ষিয়া।

তোমার দক্ষিণ দ্বার দিব পোষাইয়া।।

হ্রদে দহে তড়াগে প্রয়াগ প্রচারিব।

কূপে গঙ্গা প্রচারিয়া তীর্থ বানাইব।।

কুলজার কুলাচার ধর্ম নষ্টাইব।

বিধিভক্ত নৈষ্ঠিকের ধর্ম ভ্রষ্টাইব।।

প্রচারি পৈশাচী সিদ্ধি সাধুত্ব জানা’ব।

ভূত ভাবি বর্তমান তাহারে বলা’ব।।

কন্দর্পের দর্পে মোহাইব কতজন।

কিয়ৎক্ষণ মোহাইব মোহান্তের মন।।

কৃষ্ণভক্তি ছাড়ি পৈশাচিক মত ল’বে।

এতে তব অধিকার ক্রমেই বাড়িবে।।

তাহা শুনি যম বলে ধন্য ধন্য কলি।

যমদূত সবে নাচে দুইবাহু তুলি।।

কলি বলে ভক্ত মধ্যে বহুত পাষণ্ড।

বহিরঙ্গ ভক্ত যত সব  হ’বে ভণ্ড।।

কূপজলে দেখা’ব আশ্চর্য্য বিভীষিকা।

লোক সংঘটন হবে নাহি লেখাজোখা।।

নদী পার নিব নাবিকের নায় নিয়া।

নাবিক ছাড়িবে কর্ণ অসাধ্য হইয়া।।

গোছাল রুধির ক্লেদ টিপ্পনী তরণী।

মুচির নৌকায় পার হইবে ব্রাহ্মণী।।

হাড়ি মুচি যবন ব্রাহ্মণ আদি করি।

যাতায়াতে ফেলাইব পথ রুদ্ধ করি।।

শ্রাদ্ধোৎসর্গ তণ্ডুল পরশে প্রেম শূন্য।

অজালোম পরশনে ভক্তি হয় চূর্ণ।।

অজারক্ত খাওয়াইব কূপজলে ধুয়ে।

যাজনিক ব্রাহ্মণেরে দোকানী বানায়ে।।

তাহার মিষ্টান্ন খাওয়াইব বাজারেতে।

যাতে ভক্তি লোপ হয় তব কল্যাণেতে।।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে রয়েছে নিশানা।

পাপপূর্ণা বসুন্ধরা শস্য জন্মিবেনা।।

গাভী হবে দুগ্ধহীনা ফলহীন বৃক্ষ।

নদী-নদ খাল বিল ক্রমে হবে শুষ্ক।।

মারুতির ক্রোধ ছিল তাহা কোথা যাবে।

সেই শাপ মনস্তাপ অবশ্য ভূঞ্জিবে।।

মাতৃ পিতৃ ভাতৃ ভাত খাইবে যাচিয়া।

নরকে মজিবে ধর্ম পালিতে নারিয়া।।

রাবনের চেড়ি করে সীতাকে পীড়ণ।

তাহা দেখি কুপিলেন পবন নন্দন।।

সেইকালে আছাড়িয়া লইত জীবন।

তাহা না করিল শুনি সীতার বারণ।।

জন্মান্তরে তাহারা হইবে রোগযুক্ত।

তাহারা হইবে সব কূপতীর্থ ভক্ত।।

সধবা বিধবা সব ডুবা’বে সে কূপে।

এই দশা হবে হনুমান বীর কোপে।।

নৈষ্ঠিক প্রেমিক ভক্ত পদশিরে ধরি।

গৌরাঙ্গ হাটে গিয়া বলা’ব হরি হরি।।

না মানিবে শিব দুর্গা কৃষ্ণপ্রেমে বাম।

হরিনাম না লইবে বলি মরা নাম।।

এরূপ দুষ্কৃতি কর্মে ধর্ম কর্ম ক্ষয়।

বিস্তারি লিখিতে গেলে পুথি বেড়ে যায়।।

এরূপে বৈষ্ণব ধর্মে পড়ে গেল ত্রুটি।

সেহেতু ঘুচাতে বৈষ্ণবের কুটিনাটি।।

যুগে যুগে করে প্রভু ভূ-ভার হরণ।

দুষ্কৃতি বিনাশ আর ধর্ম সংস্থাপন।।

ব্যাসের কলমে আছে ভাগবতে শ্লোক।

স্বয়ং এর মুখ বাক্য প্রতিজ্ঞাপূর্বক।।

 

শ্লোক

পরিত্রানায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্।

ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।।

 

পয়ার

বৈষ্ণবের কুটিনাটি  খণ্ডন কারণ।

সে কারণে অবতার পুনঃ প্রয়োজন।।

দ্বাপরেতে যদুবংশে অনেক হইল।

নিজবংশ ধ্বংস বাঞ্ছা কেন বা করিল।।

আপনি এলেন ভার হরণ করিতে।

ভাবিলেন আরো ভার হ’ল আমা হতে।।

যদি বল তারা সতী গান্ধারীর শাপ।

শ্রীকৃষ্ণ ভাবিল কেন মম বংশ পাপ।।

আপনি রাখিতে হরি ব্রাহ্মণের মান্য।

হৃদয় ধরিল ভৃগুমনি পদচিহ্ন।।

যুধিষ্ঠির রাজসূয় যজ্ঞের সময়।

স্বহস্তে ব্রাহ্মণপদ শ্রীকৃষ্ণ ধোয়ায়।।

দুর্বৃত্ত যদু বালক কারে নাহি মানে।

অহংকারে মত্ত হ’য়ে না মানে ব্রাহ্মণে।।

শাম্বের পেটে কেন মুষল বাঁধিল।

কপালে সিন্দূর দিয়ে শাড়ী পরাইল।।

পথমধ্যে বসাইল নারী সাজাইয়া।

দুর্বাসাকে কহে সবে কপট করিয়া।।

কহ মুনি এই গর্ভে হবে কি সন্তান।

দ্বিজে উপহাস করে এমন অজ্ঞান।।

কৃষ্ণ যারে মানে এরা করে অপমান।

প্রকারেতে অপমান হন ভগবান।।

ইচ্ছা ক’রে ইচ্ছাময় নাশিবারে বংশ।

দুর্বাসা মুনির শাপে যদুকুল ধ্বংস।।

নিম্ববৃক্ষে কৃষ্ণ মরে মারিল অঙ্গদ।

সে তারা-সতীর শাপ এই স্থলে শোধ।।

গান্ধারীর শাপে যদি যদুবংশ ক্ষয়।

তবে কেন যদুবংশে বজ্রবীর রয়।।

যদি বল দুর্বাসার শাপে হয় ক্ষয়।

ইচ্ছাময়ের ধ্বংস ইচ্ছা এর অগ্রে হয়।।

দেখিতে দেখার আছে অনেক দ্রষ্টব্য।

মূলে ভূ-ভার হরণ মারণ সুসভ্য।।

তিনযুগে পাষণ্ডীর মস্তক ছেদন।

কলিতে পাষণ্ডী সব নামাস্ত্রে দলন।।

ধন্য ধন্য অবতীর্ণ চৈতন্য নিতাই।

নাম দিয়া উদ্ধারিল জগাই মাধাই।।

সেই নাম প্রেমমধ্যে কলি প্রবেশিল।

প্রকৃতির স্থানে বিন্দু প্লাবিত হইল।।

এইসব কুটি-নাটি খণ্ডন কারণ।

জীব উদ্ধারের জন্য হইল মনন।।

সে কারণ অবতার হৈল প্রয়োজন।

সফলানগরী যশোমন্তের নন্দন।।

সুযুক্তি বিধানে প্রভু অবতীর্ণ হ’ল।

হরিচাঁদ নামে যত ভক্তে শিক্ষা দিল।।

করিবে গৃহস্থধর্ম ল’য়ে নিজ নারী।

গৃহে থেকে ন্যাসী বাণপ্রস্থী ব্রহ্মচারী।।

ঋতুরক্ষা করিবেক জীবহত্যা ভয়।

কেহ বা পূর্ণ সন্ন্যাসী নিষ্কাম আশ্রয়।।

গৃহধর্ম গৃহকর্ম করিবে সফল।

হাতে কাম মুখে নাম ভক্তিই প্রবল।।

পরনারী মাতৃতুল্য মিথ্যা নাহি কবে।

পর দুঃখে দুঃখী সচ্চরিত্র সদা রবে।।

অদীক্ষিতে না করিবে তীর্থ পর্যটন।

মুক্তি স্পৃহা শূন্য নাই সাধন ভজন।।

এইভাবে করিবেন জীবের উদ্ধার।

একারণ হৈল যশোমন্তের কুমার।।

কৃষ্ণের প্রতিজ্ঞা ভাগবতের বচন।

যুগে যুগে করিবেন ভূ-ভার হরণ।।

সে কারণ- অবতার হৈল প্রয়োজন।

অবনীতে অবতীর্ণ পূর্ণব্রহ্ম হন।।

অগ্রে পাতকীর শিরোচ্ছেদ ধনু অস্ত্রে।

এ যুগে প্রেমদান হরিনাম মন্ত্রে।।

সব যুগে ভূ-ভার হরিল নারায়ণ।

এব কৃষ্ণভক্ত আদি করিতে শোধন।।

কৃষ্ণভক্ত শৌচ আচরণ কুটিনাটি।

শুদ্ধ প্রেমভক্তি বৈষ্ণবেতে পড়ে ত্রুটি।

অনেক কারণে হ’ল এই অবতার।

জীবের উপায় শূন্য গতি নাহি আর।।

জীবের উদ্ধার প্রেমদান প্রতিজ্ঞা পালন।

অন্নপূর্ণা শচী বাঞ্ছা করিতে পূরণ।।

নারদপুরাণে আছে নারদ সংবাদে।

নারদের কাছে হরি কহিলা আহ্লাদে।।

 

শ্লোক

কলৌ প্রথমসন্ধ্যায়াং লক্ষীকান্তো ভবিষ্যসি।

সন্ন্যাসগৌরবিগ্রহে সান্ত্বয়ে পুরুষোত্তমে।।

 

পয়ার

শাস্ত্র গ্রন্থ  ভাগবত করি সারোদ্ধার।

রচিল তারকচন্দ্র কবি সরকার।।

 

অথ দারুব্রহ্মে গৌরাঙ্গ মিলন

নবদ্বীপ আসি গোরা জীব উদ্ধারিল।

পরে শ্রীপুরুষোত্তমে লীলা সম্বরিল।।

একদিন ভক্তগণ সঙ্গেতে করিয়া।

কীর্তন করেন গোরা নাচিয়া  নাচিয়া।।

মন্দিরের দ্বারে গিয়া ভক্তগণ সঙ্গে।

জগন্নাথে বেড়িয়া নাচেন নানা রঙ্গে।।

নাচিতে নাচিতে প্রবেশিল শ্রীমন্দিরে।

প্রেমে মত্ত জগন্নাথে প্রদক্ষিণ করে।।

নাচিতে নাচিতে প্রেমে পুলকিত অঙ্গ।

জগ্ননাথ মুখচন্দ্রে পশিল গৌরাঙ্গ।।

কীর্তনান্তে গৌরবিনে সকলে অস্থির।

সবে বলে প্রভু কেন না হয় বাহির।।

অতি উৎকণ্ঠিত সবে উচাটন মন।

মন্দিরের ভিতরে কেহ করিল গমন।।

কেহ বা বাহিরে কেহ মন্দির ভিতর।

সবে কাঁদে না দেখিয়া গৌরাঙ্গ সুন্দর।।

প্রভু না দেখিয়া সবে করে হাহাকার।

কেহ বা ধরায় পড়ে জ্ঞান নাহি আর।।

কেহ বা মূর্ছিত হ’য়ে  পড়েছে ধরায়।

কেহ ব চৈতন্য পেয়ে করে হায় হায়।।

কেহ বা জগবন্ধুর পদধরি কয়।

কহ জগদ্বন্ধু জগবন্ধু সে কোথায়।।

কেহ ধরে হস্ত পদ কেহ ধরে কোল।

মোদের গৌরাঙ্গ কোথা বোল বোল বোল।।

একদৃষ্টে কেহ করে মুখ দরশন।

মুখমধ্যে দেখে তার গেরুয়া বসন।।

বসনের কোণ ধরি টানিতে লাগিল।

অরুণ বসন তারা বাহির হইল।।

গৌরাঙ্গের ভক্ত যত জগন্নাথে কয়।

আহারে রাক্ষস তোরে কে করে প্রত্যয়।।

কে বলে ঈশ্বর তোরে কে করে বিশ্বাস।

গৌরাঙ্গ খাইলি ওরে দুরন্ত রাক্ষস।।

খাইলি গৌরাঙ্গ মন্দিরেতে পেয়ে একা।

ভাল যদি চাস তবে শীগৌরাঙ্গ দেখা।।

শ্রীগৌরাঙ্গ লীলা সাঙ্গ শ্রীক্ষেত্র উৎকল।

রসনা রসনা ভরি হরি হরি বল।।

 

গৌর-ভক্ত- খেদ ও দৈবাদেশ

দীর্ঘ-ত্রিপদী

তুই খালি শ্রীগৌরাঙ্গ,     হইল রে লীলা সাঙ্গ,

আমরা এখন যাব কোথা।

যদি না গৌরাঙ্গ পাই,     প্রাণে আর কার্য নাই,

পাষাণে কুটিব গিয়া মাথা।।

মরিলে বাঁচিত প্রাণ,       পাবকি পাবকি ত্রাণ,

যে আগুনে দহিছে হৃদয়।

প্রহলাদ পুড়ে আগুনে,     শ্রীকৃষ্ণের নামগুণে,

জলন্ত অনল নিভে যায়।।

গৌরাঙ্গ গৌরাঙ্গ বলে,    জ্বলি বিচ্ছেদ অনলে,

কিসে মরি বাঁচিয়া কি ফল।।

বিরহে কাতর হ’য়ে,       জগন্নাথ কাছে গিয়ে,

বলে দেরে শ্রীগৌরাঙ্গ রায়।

গৌরাঙ্গ গ্রাসিলি যবে,     আমাদিগে গ্রাস সবে,

এত বলি মাথা পেতে দেয়।।

জগন্নাথের নিকটে,        কেহ কহে মাথা কুটে,

কেহ বলে ওরে জগন্নাথ।

বক্ষে করাঘাত হানে,      কেহ বা উন্মত্ত মনে,

জগন্নাথে মারে মুষ্ট্যাঘাত।।

দণ্ডাঘাত মুষ্ট্যাঘাত,       কেহ মুচড়ায় হাত,

উদরেতে কেহ মারে ভূষ।

কেহ পিছু পিছাইয়া,       ফিরে এসে আগুলিয়া,

নির্ভয় শরীরে মারে ঢুষ।।

ভক্তগণে দুঃখ হেরি,      জগন্নাথ কষ্ট ভারি,

সদয় হইয়া শ্রীচৈতন্য।

ভক্তগণ প্রবোধিতে,       জগন্নাথ দেহ হ’তে,

শূন্যবাণী কহে থেকে শূন্য।।

কেন জগন্নাথে মার,       আমার এ বাক্য ধর,

স্থির হও যাও নিজ ঘরে।

এ লীলা হইল সাঙ্গ,       আমার গৌরাঙ্গ অঙ্গ,

মিশে গেল আমার শরীরে।।

এবে না পাইবে দেখা,     গুরুজন শিষ্য শাখা,

স্থির কর সবে শোক মন।

কলির মধ্যাহ্নকালে,       করিব একটি লীলে,

তারপরে পাবে দরশন।।

 

লঘু ত্রিপদী

মানুষে আসিয়া,           মানুষে মিশিয়া,

করিব মানুষ লীলে।

সেই ত সময়,              পাইবা আমায়,

পুনশ্চ মানুষ হ’লে।।

আকার দেখিয়া,           লইবা চিনিয়া,

বিশুদ্ধ মাধুর্য্য ভাব।

শুদ্ধ প্রেম রসে,            তরাইব শেষে,

জগতের জীব সব।।

এতেক শুনিয়া,            শোক সম্বরিয়া,

নিজ নিজ স্থানে যায়।

এ বাক্য বিধানে,                    প্রেমরস দানে,

জনম লভিতে হয়।।

গোলোকের নাথ,          গোলোকের সাথ,

ওড়াকান্দি আগমন।

লয়ে ভক্তবৃন্দ,             করে মহানন্দ,

লীলামৃত বরিষণ।।

 

অবতার অনুক্রম, যশোমন্ত ঠাকুর ও পৌরাণিক অন্যান্য ভক্ত চরিত্র

পয়ার

শ্রীনিবাস রামচন্দ্র নরোত্তম দাস।

সাধিল নিগূঢ় লীলা নিজ অভিলাষ।।

গৌরাঙ্গ লীলায় যেন লয়ে ভক্তগণ।

ঘরে ঘরে যারে তারে দেয় প্রেমধন।।

শ্রীনিবাস রামচন্দ্র করিলেন লীলা।

নিজ ভক্তগণ ল’য়ে পেম আস্বাদিলা।।

পূর্বে প্রভু  অদ্বৈতেরে কহে যে বচন।

করিব নিগূঢ় লীলারস আস্বাদন।।

এই প্রেম দিয়া যদি জগৎ মাতায়।

নিগূঢ় প্রকট হয় পূর্ব কথা যায়।।

ধর্ম সংস্থাপন জীব উদ্ধার হইল।

পরে প্রেম প্রকাশিবে বাসনা থাকিল।।

সফলানগরী ধন্য ওড়াকান্দি ধন্য।

যে যে গ্রামে হরিচাঁদ হৈল অবতীর্ণ।।

সফলানগরী শ্রীযশোমন্ত ঠাকুর।

তাহার মহিমা কথা কহিতে প্রচুর।।

কৃষ্ণ ধ্যান কৃষ্ণ জ্ঞান কৃষ্ণ  প্রাণ তার।

কৃষ্ণের নৈবিদ্য বিনে না হত আহার।।

সদা করে কৃষ্ণ কথা কথোপকথন।

কৃষ্ণ বলে অশ্রুজলে ভাসিত নয়ন।। (বয়ন)

প্রতিপক্ষে করাইত বৈষ্ণব ভোজন।

হরিব্রত একাদশী নাম সংকীর্তন।।

নীচ নীচ কুলে প্রভু দিয়া প্রেমধন।

নমঃশূদ্র কুলে এল ব্রহ্ম সনাতন।।

হয়গ্রীব কপিল হইল অবতার।

অংশ-অবতার সেও ব্রাহ্মণ কুমার।।

ব্রাহ্মণ সম্মান হেতু ভৃগুপদ ধরে।

শ্রীবামন অবতার কশ্যপের ঘরে।।

ভৃগুরাম অবতার জমদগ্নি সুত।

ক্রমে নীচ কুলে যায় হ’য়ে পদচ্যুত।।

শেষে দ্বিজ হ’তে  এক পদ নীচে এলে।

ক্ষত্রীয় কুলেতে জন্ম করে রামলীলে।।

প্রথম পুরুষ অবতার রাম হ’ন।

তারপরে গোপ বৈশ্য শ্রীনন্দ নন্দন।।

ধরা দ্রোণ দুই জন ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণী।

অতিথি বিধানে পূজে শ্যাম চিন্তামণি।।

ছদ্মবেশে পদ্মনেত্র গিয়া সেই স্থানে।

ধরাকে দিলেন ধরা আতিথ্য বিধানে।।

স্তন কেটে সেবা করে সেই ত ব্রাহ্মণী।

ভক্তিতে আবদ্ধ হ’ল শ্যাম চিন্তামণি।।

ধরাকে দিলেন হরি এ সত্য কড়ার।

দ্বাপরে শোধিব মাগো তব ঋণধার।।

যেই স্তন কেটে মাগো আমাকে সেবিলে।

পুত্ররূপে সেই স্তন খাইব মা বলে।।

পতিত পাবন পুত্র পাইবেন বলে।

নীচ কুলে নন্দ এসে গোপ বৈশ্য হ’লে।।

দ্বাপরে করিল লীলা সেই ভগবান।

ব্রজলীলা ত্যাজি মথুরাতে হরি যান।।

সুদাম মালীর কন্যা কুবুজা সুন্দরী।

বসুদেব নন্দনের হৈল পাটেশ্বরী।।

যদুকুলে রাজা নাই উগ্রসেন রাজা।

রাজা হয়ে করে কুব্জা মোহনের পূজা।।

দ্বারকায় গিয়ে হরি লীলা প্রকাশিল।

প্রেমদায় অর্জুনের সারথি হইল।।

পঞ্চভাই শ্রীকৃষ্ণের পঞ্চআত্মা প্রায়।

সে ‘দিব্য বিলাপ সিন্ধু’ গ্রন্থে লেখা যায়।।

সেই পঞ্চভাই সতী দ্রৌপদী সহিতে।

নিযুক্ত হইল রাম দাসের সেবাতে।।

রাজসূয় যজ্ঞকালে মুনিগণ ভজে।

মুচিরাম সেবাকালে স্বর্গে ঘণ্টা বাজে।।

ক্রমেই বাড়ান হরি নীচ জন মান।

তৃণাদপি শ্লোকে তার আছয় প্রমাণ।।

রাখালের এঁঠো খায় কিবা সখ্য ভাব।

বিদুরের খুদ খায় শুদ্ধ প্রেম ভাব।।

শচীগর্ভ সিন্ধু মাঝে ইন্দু পরকাশ।

হবিউল্লা কাজী পুত্র ব্রহ্ম হরিদাস।।

নরোত্তম  করিয়াছে বৈষ্ণব বন্দনা।

কালীদাসে দেখায়েছে তাহার নিশানা।।

কায়স্থ কুলেতে জন্ম রায় রামানন্দ।

তার ঠাঁই কৃষ্ণপ্রেম পাইয়া আনন্দ।।

যুগল মধুর প্রেম করিল প্রকাশ।

রঘুনাথের খুল্লতাত নাম কালিদাস।।

বন্দি সেই কালীদাস রঘুনাথের খুড়া।

বৈষ্ণবের উচ্ছিষ্ট খাইয়া সেই বুড়া।।

বৈষ্ণবের শিরোমণি ঝড়ু ভুঁইমালী।

যে পথে হাঁটিতো কালীদাস মাখে ধুলি।।

উচ্ছিষ্ট খাইতে সাধু পলাইয়া রয়।

ঝড়ুর রমণী যবে উচ্ছিষ্ট ফেলায়।।

কলার ডোঙ্গায় সাধু পেয়ে আম্র আটি।

বৈষ্ণব প্রসাদ বলে করে চাটাচাটি।।

প্রভুর নিকটে গিয়া বলে হরিবোল।

অন্তর্যামী মহাপ্রভু ধরে দিল কোল।।

অদ্য হ’ল বৈষ্ণবের প্রসাদ ভাজন।

তুমি কালীদাস মোর জীবনের জীবন।।

ব্রহ্মবংশে জন্মিয়া গৌরাঙ্গ ভগবান।

যবন ব্রাহ্মণ সব করিলা সমান।।

রায় রামানন্দে বলে প্রতিজ্ঞা করিয়া।

কর্মী জ্ঞানী মাতাইব নীচ শূদ্র  দিয়া।।

বাদশাহের উজির ছিল দু’টি ভাই।

রামকেলী গ্রামে গেল গৌরাঙ্গের ঠাঁই।।

বাহু প্রসারিয়া প্রভু দিল আলিঙ্গণ।

তারা  বলে মোরা হই অস্পৃশ্য যবন।।

নীচকুলে জন্ম মোরা করি নীচ কাজ।

মোদের স্পর্শিলা হরি লোকে দিবে লাজ।।

চৈতন্য চরিতামৃতে আছয় প্রকাশ।

সাকর মল্লিক আর নাম দবির খাস।।

ভাগবতে নাম রূপ সাকর মল্লিক।

দবির খাস সনাতন পরম নৈষ্ঠিক।।

প্রভু বলে যুগে যুগে ভক্ত দুইজন।

আজ হ’তে নাম হ’ল রূপ সনাতন।।

অবতার যখন হলেন শ্রীনিবাস।

নিত্যানন্দ হইলেন নরোত্তম দাস।।

কায়স্থ শ্রীকৃষ্ণানন্দ দত্ত খেতরিতে।

তার পুত্র নরোত্তম ব্যক্ত এ জগতে।।

সেই নরোত্তম শিষ্য দুই মহামতি।

একশাখা গঙ্গানারায়ণ চক্রবর্তী।।

আর শাখা চক্রবর্তী রামনারায়ণ।

শূদ্রের হইল শিষ্য দু’জন ব্রাহ্মণ।।

কিবা শূদ্র কিবা ন্যাসি যোগী কেন নয়।

যেই জানে কৃষ্ণ তত্ত্ব সেই শ্রেষ্ঠ হয়।।

 

শ্লোক

ন শূদ্রা ভগবদ্ভক্তা স্তেহপি ভাগবতোত্তমাঃ।

সর্ব্ববর্ণেষু তে শূদ্রা যে ন ভক্তা জনার্দ্দনে।।

 

অপিচ

চণ্ডলোহপি মুনিশ্রেষ্ঠ হরিভক্তিপরায়ণঃ।

হরিভক্তিবিহীনশ্চ দ্বিজোহপি শ্বপচাধমঃ।।

 

পয়ার

পাষণ্ড দলনে আছে বহুত প্রমাণ।

ভক্ত হ’লে প্রভু তার বাড়ান সম্মান।।

আর ত প্রমাণ এক রাম অবতারে।

রাম কার্য্য করে সব ভল্লুক বানরে।।

কিবা জাতি কিবা কুল রাখাল ভূপাল।

শ্রীরামের মিত্র কপি রাক্ষস চণ্ডাল।।

নীচকুল ভক্তিগুণে করিল পবিত্র।

এ লীলায় হইল প্রভু যশোমন্ত পুত্র।।

কিসের রসিক ধর্ম কিসের বাউল।

ধর্ম যজে নৈষ্ঠিকেতে অটল আউল।।

সর্ব ধর্ম লঙ্ঘি এবে করিলেন স্থুল।

শুদ্ধ মানুষেতে আর্তি এই হয় মূল।।

জীবে দয়া নামে রুচি মানুষেতে নিষ্ঠা।

ইহা ছাড়া আর যত সব ক্রিয়া ভ্রষ্টা।।

এই সুক্ষ্ম সনাতন ধর্ম জানাইতে।

জনম লভিলা যশোমন্তের গৃহেতে।।

মুখে বল হরি হরি হাতে কর কাজ।

হরি বল দিন গেল বলে রসরাজ।।




Copywright by - http://horibol.page.tl/


0 comments:

Post a Comment

 
Top