sachin

আইপিএল-এর ধুমধাড়াক্কা চলছে গোটা দেশে। আমজনতা টি টোয়েন্টি দেখে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে তুলতে স্টেডিয়াম ছাড়ছেন। আর তিনি— রমাকান্ত আচরেকর কী করছেন?  
সচিন রমেশ তেন্ডুলকরের বিশ্ববন্দিত কোচ তিনি। সচিন-আচরেকর-এর যুগলবন্দি এখন কিংবদন্তির পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। স্কুটারে চাপিয়ে সচিনকে এক মাঠ থেকে অন্য মাঠে নিয়ে যেতেন গুরু। উদ্দেশ্য ছিল একটাই। সচিন যেন বেশি ব্যাট করার সুযোগ পায়। গুরু ও শিষ্যকে নিয়ে কত গল্প যে প্রচলিত রয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। সেই আচরেকর এখন নিজেকে বন্দি করে রেখেছেন বাড়িতে। বাইরে হাঁটাচলা করেন না। স্মৃতিবিভ্রম হয়েছে ‘দ্রোণাচার্য’ কোচের। সব কথা মনে নেই। মনে রাখতেও পারেন না। কথাবার্তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অল্পসল্প কথা বলেন। কেউ জিজ্ঞাসা করলে, তবেই কথা বলেন। না হলে গোটা দিন চুপ করে থাকেন তিনি।
কেমন আছেন রমাকান্ত আচরেকর? তাঁর শরীর স্বাস্থ্য কেমন? প্রিয় শিষ্যরা কি আসেন তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য? অশীতিপর বৃদ্ধের খোঁজখবর নেওয়ার জন্যই দূরভাষে যোগাযোগ করা হয়েছিল আচরেকরের জামাই দীপক মুরকরের সঙ্গে। তাঁর বাড়িতেই এখন থাকেন সচিনের শ্রদ্ধেয় কোচ। মঙ্গলবার এবেলা.ইন-কে দীপক বলেন, ‘মুম্বইয়ে আসুন। নিজে চোখেই দেখে যান রমাকান্ত আচরেকর কেমন আছেন। এখন তো আইপিএল চলছে। খেলাও আছে এখানে। সেই সঙ্গে ওঁকেও দেখে যান।’  তার পরেই গড়গড় করে রমাকান্তের জামাতা বলে চলেন, ‘আগের মতোই রয়েছেন আচরেকর। শারীরিক দিক থেকে খুব একটা অবনতি হয়নি ওঁর। তবে এখন আর কথাবার্তা বলেন না। হ্যাঁ, না-তেই উত্তর সারেন। শরীর ভারী হওয়ার জন্য বসে থাকতে একেবারেই পারেন না। বসে টিভি দেখার কোনও প্রশ্নই নেই।’  
আগে ক্রিকেটের জন্য সারা দিন মাঠে পড়ে থাকতেন। সচিনকে নিয়ে পড়ে থাকতেন দিবারাত্রি। বিশ্বসেরা ক্রিকেটার হয়ে সচিন আগেই আচরেকরকে গুরুদক্ষিণা দিয়েছেন। অনেকেই বলে থাকেন, আচরেকর ছিলেন বলেই সচিন নিজের কেরিয়ারকে এভারেস্ট-উচ্চতায় নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। নিন্দুকেরা এর সঙ্গে একমত হতেও পারেন, আবার না-ও হতে পারেন। সে যাই হোক না কেন, আচরেকর এখন আর প্রিয় খেলা ক্রিকেট দেখেন না টিভির পর্দায়। ক্রিকেটের কক্ষপথ থেকে বহু দূরে তিনি। আইপিএল দেখার প্রশ্নই নেই। শরীর বিদ্রোহ করে বসেছে। খেলা আর দেখবেন কীভাবে? ভবিষ্যতের সচিন তৈরি করতেও আর মাঠে ছোটেন না তিনি। ছুটবেনই বা কী ভাবে? জামাই দীপক বলছিলেন, ‘১৯৯৬ সালে স্ট্রোক হয়েছিল। পক্ষাঘাত হয় তখনই। সেই সময় থেকেই ক্রিকেট মাঠের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়।’ ‘মাস্টার ব্লাস্টার’ কি আসেন কোচকে গুরুদক্ষিণা দিতে? ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার পরে আরও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সচিন। ‘গুরু’র বাড়িতে আসার সময় কি পান তিনি? দীপক মুরকর বলছিলেন, ‘প্রতি মাসে এসে গুরুর সঙ্গে দেখা করে যায় সচিন। বাড়িতে এলে সচিন জিজ্ঞাসা করে, কেমন আছেন স্যার? সব ঠিকঠাক তো?’ এখন আর আগের মতো অনর্গল ছাত্রের সঙ্গে কথা বলতে পারেন না আচরেকর। হ্যাঁ, না-তেই সচিনের সব প্রশ্নের উত্তর সারেন ভারতের কিংবদন্তি কোচ।   
নিজেই নিজের ভিতরে জগৎ তৈরি করে রেখেছেন আচরেকর। নিজের মেয়ে কল্পনা, জামাতার সঙ্গে একটা-দুটো কথা বললেও নাতি বৈদিকের সঙ্গে ৮৫ বছরের আচরেকরের আত্মিক যোগ। নাতি ক্রিকেট খেলে। মুম্বইয়ের ঘরোয়া ক্রিকেটে বৈদিকের নাম আছে। অনুশীলন সেরে ঘরে ফিরলেই বৈদিকের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করে দেন দাদু। হাত তুলে নাতির খেলার খবর জিজ্ঞাসা করেন আচরেকর। নাতি বৈদিকের মধ্যে হয়তো আর এক সচিনকে খুঁজে পান রমাকান্ত আচরেকর।
স্নেহধারা যে কনিষ্ঠের দিকেই ধাবিত হয়। 

0 comments:

Post a Comment

 
Top