যেখানেতে দেখি যাহা 
 মা-এর মতন আহা 
 একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই, 
 মায়ের মতন এত 
 আদর সোহাগ সে তো 
 আর কোনখানে কেহ পাইবে ভাই! 

 হেরিলে মায়ের মুখ 
 দূরে যায় সব দুখ, 
 মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান, 
 মায়ের শীতল কোলে 
 সকল যাতনা ভোলে 
 কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান। 

 কত করি উৎপাত 
 আবদার দিন রাত, 
 সব স’ন হাসি মুখে, ওরে সে যে মা! 
 আমাদের মুখ চেয়ে 
 নিজে র’ন নাহি খেয়ে, 
 শত দোষী তবু মা তো তাজে না। 

 ছিনু খোকা এতটুকু, 
 একটুতে ছোট বুক 
 যখন ভাঙিয়া যেতো, মা-ই সে তখন 
 বুকে করে নিশিদিন 
 আরাম-বিরাম-হীন 
 দোলা দেয় শুধাতেন, ‘কি হোলো খোকন?’ 

 আহা সে কতই রাতি 
 শিয়রে জ্বালায়ে বাতি 
 একটু আসুখ হলে জাগেন মাতা, 
 সব-কিছু ভুলে গিয়ে 
 কেবল আমায়ের নিয়ে 
 কত আকুলতা যেন জাগন্মাতা। 

 যখন জন্ম নিনু 
 কত আসহায় ছিনু, 
 কাঁদা ছাড়া নাহি জানিতাম কোন কিছু, 
 ওঠা বসা দূরে থাক- 
 মুখে নাহি ছিল বাক, 
 চাহনি ফিরিত শুধু আর পিছু পিছু। 

 তখন সে মা আমার 
 চুমু খেয়ে বারবার 
 চাপিতেন বুকে, শুধু একটি চাওয়ায় 
 বুঝিয়া নিতেন যত 
 আমার কি ব্যথা হোতো, 
 বল কে ওমন স্নেহে বুকটি ছাওয়ায়। 

 তারপর কত দুখে 
 আমারে ধরিয়া বুকে 
 করিয়া তুলেছে মাতা দেখো কত বড়, 
 কত না সে সুন্দর 
 এ দেহে এ অন্তর 
 সব মোর ভাই বোন হেথা যত পড়। 

 পাঠশালা হ’তে যবে 
 ঘরে ফিরি যাব সবে, 
 কত না আদরে কোলে তুলি’ নেবে মাতা, 
 খাবার ধরিয়া মুখে 
 শুধাবেন কত সুখে 
 কত আজ লেখা হোলো, পড়া কত পাতা?’ 

 পড়া লেখা ভাল হ’লে 
 দেখেছ সে কত ছলে 
 ঘরে ঘরে মা আমার কত নাম করে। 
 বলে, ‘মোর খোকামনি! 
 হীরা-মানিকের খনি, 
 এমনটি নাই কারো!’ শুনে বুক ভরে। 

 গা’টি গরম হলে 
 মা সে চোখের জলে 
 ভেসে বলে, ‘ওরে যাদু কি হয়েছে বল’। 
 কত দেবতার ‘থানে’ 
 পীরে মা মানত মানে- 
 মাতা ছাড়া নাই কারো চোখে এত জল। 

 যখন ঘুমায়ে থাকি 
 জাগে রে কাহার আঁখি 
 আমার শিয়রে, আহা কিসে হবে ঘুম। 
 তাই কত ছড়া গানে 
 ঘুম-পাড়ানীরে আনে, 
 বলে, ‘ঘুম! দিয়ে যা রে খুকু-চোখে চুম’। 

 দিবানিশি ভাবনা 
 কিসে ক্লেশ পাব না, 
 কিসে সে মানুষ হব, বড় হব কিসে; 
 বুক ভ’রে ওঠে মা’র 
 ছেলেরি গরবে তাঁর, 
 সব দুখ হয় মায়ের আশিসে। 

 আয় তবে ভাই বোন, 
 আয় সবে আয় শোন 
 গাই গান, পদধূলি শিরে লয়ে মা’র; 
 মা’র বড় কেহ নাই- 
 কেউ নাই কেউ নাই! 
 নত করি বল সবে ‘মা আমার! মা আমার!’ 

0 comments:

Post a Comment

 
Top