একদা রাতে নবীন যৌবনে 
 স্বপ্ন হতে উঠিনু চমকিয়া, 
 বাহিরে এসে দাঁড়ানু একবার--- 
 ধরার পানে দেখিনু নিরখিয়া । 
 শীর্ণ হয়ে এসেছে শুকতারা, 
 পূর্বতটে হতেছে নিশিভোর । 
 আকাশকোণে বিকাশে জাগরণ, 
 ধরণীতলে ভাঙে নি ঘুমঘোর । 
 সমুখে প'ড়ে দীর্ঘ রাজপথ, 
 দু ধারে তারি দাঁড়ায়ে তরুসার, 
 নয়ন মেলি সুদূর-পানে চেয়ে 
 আপন-মনে ভাবিনু একবার--- 
 অরুণ-রাঙা আজি এ নিশিশেষে 
 ধরার মাঝে নূতন কোন্ দেশে 
 দুগ্ধফেনশয়ন করি আলা 
 স্বপ্ন দেখে ঘুমায়ে রাজবালা ।। 

 অশ্ব চড়ি তখনি বাহিরিনু, 
 কত যে দেশ বিদেশ হনু পার ! 
 একদা এক ধূসরসন্ধ্যায় 
 ঘুমের দেশে লভিনু পুরদ্বার । 
 সবাই সেথা অচল অচেতন, 
 কোথাও জেগে নাইকো জনপ্রাণী, 
 নদীর তীরে জলের কলতানে 
 ঘুমায়ে আছে বিপুল পুরীখানি । 
 ফেলিতে পদ সাহস নাহি মানি, 
 নিমেষে পাছে সকল দেশ জাগে । 
 প্রাসাদ মাঝে পশিনু সাবধানে, 
 শঙ্কা মোর চলিল আগে আগে । 
 ঘুমায় রাজা, ঘুমায় রানীমাতা, 
 কুমার-সাথে ঘুমায় রাজভ্রাতা । 
 একটি ঘরে রত্নদীপ জ্বালা, 
 ঘুমায়ে সেথা রয়েছে রাজবালা ।। 
 কমলফুল বিমল শেজখানি, 
 নিলীন তাহে কোমল তনুলতা । 
 মুখের পানে চাহিনু অনিমেষে, 
 বাজিল বুকে সুখের মত ব্যাথা । 
 মেঘের মত গুচ্ছ কেশরাশি 
 শিথান ঢাকি পড়েছে ভারে ভারে । 
 একটি বাহু বক্ষ-'পরে পড়ি, 
 একটি বাহু লুটায় এক ধারে । 
 আঁচলখানি পড়েছে খসি পাশে, 
 কাঁচলখানি পড়িবে বুঝি টুটি--- 
 পত্রপুটে রয়েছে যেন ঢাকা 
 অনাঘ্রাত পূজার ফুল দুটি । 
 দেখিনু তারে, উপমা নাহি জানি--- 
 ঘুমের দেশে স্বপন একখানি, 
 পালঙ্কেতে মগন রাজবালা 
 আপন ভরা লাবণ্যে নিরালা ।। 

 ব্যাকুল বুকে চাপিনু দুই বাহু, 
 না মানে বাধা হৃদয়কম্পন । 
 ভূতলে বসি আনত করি শির 
 মুদিত আঁখি করিনু চুম্বন । 
 পাতার ফাঁকে আঁখির তারা দুটি, 
 তাহারি পানে চাহিনু একমনে--- 
 দ্বারের ফাঁকে দেখিতে চাহি যেন 
 কী আছে কোথা নিভৃত নিকেতনে । 
 ভূর্জপাতে কাজলমসী দিয়ে 
 লিখিয়া দিনু আপন নামধাম । 
 লিখিনু, 'অয়ি নিদ্রানিমগনা, 
 আমার প্রাণ তোমারে সঁপিলাম ।' 
 যতন করে কনক-সুতে গাঁথি 
 রতন-হারে বাঁধিয়া দিনু পাঁতি--- 
 ঘুমের দেশে ঘুমায়ে রাজবালা, 
 তাহারি গলে পরায়ে দিনু মালা ।।

0 comments:

Post a Comment

 
Top